ক্ষমতার পূর্বে নরেন্দ্র মোদির জীবনের গল্প।

ক্ষমতার পূর্বে নরেন্দ্র মোদির জীবনের গল্প।
ক্ষমতার পূর্বে নরেন্দ্র মোদির জীবনের গল্প
নরেন্দ্র মোদি

ক্ষমতার পূর্বে নরেন্দ্র মোদির জীবনের গল্প

ভারতের বর্তমান রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদি একটি বহুল আলোচিত নাম। একজন সাধারণ পরিবারের সন্তান থেকে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্রনেতা হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ ও অভিজ্ঞতায় ভরা জীবন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনেক আগেই তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় তাঁকে কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে এবং গড়ে তুলেছে এক দৃঢ় চরিত্র।

শৈশব ও পারিবারিক জীবন

নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি জন্মগ্রহণ করেন ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৫০ সালে ভারতের গুজরাট রাজ্যের মেহসানা জেলার ভাদনগর শহরে। তাঁর বাবা দামোদরদাস মোদি ছিলেন একজন সাধারণ চা বিক্রেতা এবং মা হীরাবেন মোদি ছিলেন একজন পরিশ্রমী গৃহিণী। ছয় ভাইবোনের সংসারে বেড়ে ওঠা মোদির শৈশব কেটেছে সীমিত আয়ের মধ্যে, যেখানে প্রতিদিনের জীবন ছিল সংগ্রামে ভরা।

ছোট বয়সেই মোদি বাবার সঙ্গে রেলস্টেশনে চা বিক্রি করতেন। এই সময় তিনি সাধারণ মানুষের কষ্ট, দুঃখ এবং জীবন সংগ্রামের বাস্তব চিত্র কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান। এই অভিজ্ঞতাই পরবর্তীতে তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের ভিত গড়ে দেয়।

শিক্ষাজীবন ও চিন্তাধারার বিকাশ

নরেন্দ্র মোদি ভাদনগরের স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করেন। তিনি খুব মেধাবী ছাত্র না হলেও বক্তৃতা, বিতর্ক ও নাটকে আগ্রহী ছিলেন। বিদ্যালয় জীবন থেকেই তাঁর মধ্যে নেতৃত্বের গুণ ও আত্মবিশ্বাসের পরিচয় পাওয়া যায়।

কৈশোর বয়সে তিনি স্বামী বিবেকানন্দের জীবন ও আদর্শে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হন। আত্মনির্ভরতা, দেশপ্রেম ও সেবার দর্শন তাঁর চিন্তাধারায় গভীর প্রভাব ফেলে। এই সময়েই তিনি সমাজ ও দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।

গৃহত্যাগ ও সাধনার জীবন

অল্প বয়সেই নরেন্দ্র মোদি সংসারজীবনের প্রতি অনীহা প্রকাশ করেন। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁর বিয়ে হলেও তিনি সংসারজীবনে প্রবেশ করেননি। বরং আত্মঅন্বেষণ ও জীবনের প্রকৃত অর্থ খুঁজতে তিনি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন।

কয়েক বছর ধরে তিনি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করেন। হিমালয়ের আশ্রমে সময় কাটান, সাধু-সন্ন্যাসীদের সংস্পর্শে আসেন এবং আত্মসংযম ও শৃঙ্খলার জীবনযাপন করেন। এই পর্ব তাঁর মানসিক দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস গঠনে বড় ভূমিকা রাখে।

আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া

শৈশবকাল থেকেই নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS)-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গৃহত্যাগের পর পুনরায় সংগঠনে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেন। আরএসএস-এর শাখায় শাখায় কাজ করে তিনি সংগঠনের শৃঙ্খলা, আদর্শ ও নেতৃত্ব সম্পর্কে গভীর ধারণা লাভ করেন।

সংগঠনের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম ও সাংগঠনিক দক্ষতা দ্রুতই ঊর্ধ্বতন নেতাদের নজরে আসে। তাঁকে বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং তিনি নিরলসভাবে তা পালন করেন।

রাজনীতিতে প্রবেশের প্রস্তুতি

আরএসএস-এর মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদির যোগাযোগ হয় ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)-এর সঙ্গে। শুরুতে তিনি দলের পেছনের সারির একজন কর্মী হিসেবে কাজ করেন। নির্বাচনী প্রচার, সংগঠন গড়া এবং কৌশল নির্ধারণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

এই সময় তিনি প্রচারের কাজে দেশজুড়ে ঘুরে বেড়ান, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা বোঝেন। ক্ষমতার কাছাকাছি না থেকেও তিনি রাজনীতির ভেতরের কাঠামো ও কৌশল আয়ত্ত করেন।

সংগ্রামী জীবনের শিক্ষা

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদির জীবন ছিল ত্যাগ ও পরিশ্রমে ভরা। চা বিক্রেতার ছেলে থেকে একজন সংগঠক, সাধক ও রাজনৈতিক কৌশলবিদ হয়ে ওঠার পথটি সহজ ছিল না। এই দীর্ঘ পথচলায় তিনি শিখেছেন ধৈর্য, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং লক্ষ্যপূরণের দৃঢ় সংকল্প।

ক্ষমতায় আসার পূর্বের এই জীবনই তাঁকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ রাখতে শিখিয়েছে এবং একজন শক্ত মানসিকতার নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছে।

উপসংহার

নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতার পূর্বের জীবনের গল্প শুধুমাত্র একজন নেতার উত্থানের কাহিনি নয়, বরং এটি সংগ্রাম থেকে সাফল্যে পৌঁছানোর এক অনন্য উদাহরণ। সীমিত সম্পদ, কঠিন বাস্তবতা ও আত্মঅন্বেষণের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা এই জীবন তাঁকে ভবিষ্যতের নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করেছে। এই গল্প আজও লক্ষ কোটি মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...